রান তাড়ার তাগিদ ছিল না ধোনির, পরাজয়ে ধাক্কা খেল পড়শিদের সেমিফাইনালের স্বপ্ন
৩৩৮ রানের লক্ষ্য। অথচ শুরুতেই ওকসকে তিনটি ওভার মেডেন দিয়ে দিলেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা।

নিজস্ব প্রতিবেদন: ৩৩৮ রানের টার্গেট। শেষ ১০ ওভারে দরকার ১০৪। মানে ওভার পিছু প্রায় ১০। টি-২০ ক্রিকেটের যুগে এটা জলভাত। কিন্তু শেষ ১০ ওভারে জেতার আশাই ছেড়ে দিলেন মহেন্দ্র সিং। কমেন্ট্রিবক্সে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, ভিভিএস লক্ষ্মণরাও ধোনির কৌশল বুঝে উঠতে পারলেন না। বলতে গেলে তখনই ইংল্যান্ডের সামনে আত্মসমর্পণ করে দিল টিম ইন্ডিয়া। ভারতের হারে কণ্টকাকীর্ণ হয়ে গেল বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার সেমিফাইনাল যাওয়ার রাস্তা।
৩৩৮ রানের লক্ষ্য। অথচ শুরুতেই ওকসকে তিনটি ওভার মেডেন দিয়ে দিলেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। কেএল রাহুল শূন্যে রানে আউট হওয়ার পর হাল ধরেন বিরাট-রোহিত। শুরুতে ধরে খেলতে থাকেন দুই ব্যাটসম্যান। কিন্তু তারপর আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসে চোখ ধাঁধানো শট। রান তাড়া করার ক্ষেত্রে বিরাট কোহলির রেকর্ডে ধারেকাছে কেউ নেই। কাছাকাছি আসেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। এদিনও তেমন প্রত্যাশা জাগিয়ে তুলেছিলেন ভারতের অধিনায়ক। চলতি বিশ্বকাপে পরপর ৫টি ম্যাচে অর্ধ শতরান হাঁকালেন। ছুঁলেন গত বিশ্বকাপে স্টিভ স্মিথের রেকর্ড। কিন্তু কোহলি মানেই তো বিরাট শতরান। মোক্ষম সময়েই তো জ্বলে ওঠে তাঁর ব্যাট। এদিন আবার নিরাশ করেন বিরাট। ৭৬ বলে করেন ৬৬। কোহলি যখন আউট হলেন ভারতের স্কোর ২৮.২ ওভারে ১৪৬। জরুরি রান রেটের চেয়ে অনেকটাই কম। ফলে শুরু থেকেই মন্থর ব্যাটিং করেছে ভারত। এরপর শতরান করে আউট হন রোহিত শর্মা। তখন ভারত ৩৬.১ ওভারে ১৯৮। এরপর পন্থ ও পান্ডিয়া দলকে টানতে থাকেন। তখনও আশায় ভারতীয় সমর্থকরা। ৩৯.১ ওভারে প্যাভিলিয়নে ফিরলেন পন্থ। নামলেন ধোনি।
শেষ ১০ ওভারে দরকার ১০৪। কিন্তু ধোনির কাছ থেকে সেই গরজই দেখা গেল না। পান্ডিয়া আউট হওয়ার পর যেন ম্যাচটা ছেড়েই দিলেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক। ইতিমধ্যেই সমালোচিত হয়েছে তাঁর ধীরগতির ব্যাটিং। এদিনও সেই একই ছবি। শেষ ১০ ওভারে মাত্র ৭টি বাউন্ডারি ও একটা ওভার বাউন্ডারি মেরেছে টিম ইন্ডিয়া। তার মধ্যে ছক্কাটি এসেছে শেষ ওভারে। ভারতের এমন ব্যাটিং দেখে তো তাজ্জব সৌরভ-লক্ষ্মণরাও। হাতে ৬ উইকেট, ক্রিজে মাহি-পান্ডিয়ার মতো বিগ হিটার, তারপরেও কেন এমন টেস্ট ক্রিকেটের বোলিং? ঠিক কী করতে চাইছে ভারত? ৩১ বলে ৪২ রানে অপরাজিত থাকেন মাহি। খেলার শেষে বিরাট বললেন, চেষ্টা করেছিলেন এমএস। ওরা ভাল বল করেছে। বাউন্ডারি পাচ্ছিলেন না। চেষ্টা করব ঘুরে দাঁড়ানোর।
ভারত হারায় বিপাকে পড়েছে পড়শি দুই দেশ। এই ম্যাচে ভারত জিতলে সেমিফাইনালের রাস্তা অনেকটাই মসৃণ হতো বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার। কিন্তু এখন জটিল অঙ্কের আবর্ত ঢুকে পড়ল তারা। তবে ভারতের হাতে দুটি ম্যাচ বাকি। একটা বাংলাদেশ, আর একটায় প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। পরের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে হারালেই বাংলাদেশ-পাকিস্তানের বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ম্যাচের আগে থেকে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, পাকিস্তানকে সবক শেখাতে ইচ্ছে করে ম্যাচ হারবে ভারত। এমনকি দুই প্রাক্তন পাকিস্তানি ক্রিকেটারও এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন। কয়েকজন ভারতীয়ও এদিন মজা করে বিরাটদের পরাজয় দেখতে চাইছিলেন। ক্রিকেটবোদ্ধারা অবশ্য মনে করছেন, ম্যাচের শুরু থেকেই অতিরিক্ত মন্থর ব্যাটিংয়ে শেষের দিকে চাপ বেড়ে গিয়েছে। ১০ ওভারে ১০৪ রান তোলা মুখের কথা নয়। আর টার্গেটে যখন পৌঁছনো সম্ভব নয়, তখন কৌশল বদলে ফেলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। রান তাড়া করতে গিয়ে দ্রুত উইকেট হারালে কমে যেত রান রেট। সে কারণেই দলকে তিনশো পার করিয়ে পাঁচ উইকেট হাতে রাখলেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক।
দিনটা ভারতীয় বোলারদের জন্যেও বেশ খারাপ। ভারতের দুই স্পিনারের তো আরও দুরাবস্থা। ১০ ওভারে ৮৮ দিলেন যুজবেন্দ্র চহল। নেই একটাও উইকেট। একটা উইকেট নিয়ে ১০ ওভারে ৭২ রান দেন কুলদীপ যাদব। পেয়েছেন জেসন রয়ের উইকেট। তবে উইকেটটি যতটা না চায়নাম্যান স্পিনারের, তার চেয়ে বেশি রবীন্দ্র জাডেজার। লং অনে বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা ক্যাচ তালুবন্দি করেছেন ভারতীয় অলরাউন্ডার। উইকেট তুলে ইংল্যান্ডের রানের বন্যায় বাঁধ দেয় মহম্মদ শামির ৫ উইকেট ও বুমরার কৃপণ বোলিং। ৩৩৭ রান তোলে ইংল্যান্ড।
আরও পড়ুন- দারুণ হয়েছে জার্সি, প্রশংসায় সচিন; টি ২০-তে ব্যবহৃত হতে পারে, মত সৌরভের