Exclusive, Akash Deep: বিরাট-ধোনি বাড়িয়েছেন মানসিক শক্তি, সৌরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বদলার ফাইনালে নামছেন আকাশ
Akash Deep: শুধু সেমি ফাইনাল নয়। হরিয়ানার বিরুদ্ধে শেষ অ্যাওয়ে ম্যাচে 'ম্যান অফ দ্য ম্যাচ' হওয়ার পর ঝাড়খণ্ডের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনাল ও এবার মধ্যপ্রদেশের প্রথম ইনিংস মাত্র ১৭০ রানে শেষ করে দেওয়ার সুবাদে চলতি মরসুমে মোট তিনবার 'ম্যান অফ দ্য ম্যাচ' হলেন এই ডানহাতি পেসার।


সব্যসাচী বাগচী
ফাইনাল সরকারিভাবে কনফার্ম হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ওঁর ফোন বেজে উঠেছিল। 'সৌরাষ্ট্র ও কর্নাটক-কে ফাইনালে যাবে বুঝতে পারছি না। কিছুক্ষণ পরে প্লিজ ফোন করুন।' সাধারণত এমন ভরা বাজারের দিনে পারফর্মারকে হাতের কাছে পাওয়া খুবই কঠিন হয়ে যায়। এরমধ্যে সেই তারকা যদি চোখের সামনে না থাকেন, তাহলে তো রক্তচাপ বাড়বেই। কারণ ক্রমাগত ফোন এনগেজ থাকতেই পারে। তবে এবার তেমন কিছুই হল না। সৌরাষ্ট্র (Saurashtra) চার উইকেটে দ্বিতীয় সেমি ফাইনাল জিতে যাওয়ার পরেই, জি ২৪ ঘন্টার সঙ্গে টেলিফোনে খোলামেলা আড্ডা দিলেন বাংলার (Bengal) পেস সেনসেশন আকাশ দীপ (Akash Deep)। উঠে এল বিরাট কোহলি (Virat Kohli)-মহেন্দ্র সিং ধোনি (Mahendra Singh Dhoni) থেকে সৌরাষ্ট্রের (Saurashtra) বিরুদ্ধে ঘরের মাঠ ইডেন গার্ডেন্সে (Eden Gardens) ফাইনাল, গত ফাইনালে হারের বদলা নেওয়া থেকে শুরু করে তিনবার ম্যাচের সেরা হওয়ার প্রসঙ্গ।
প্রশ্ন: আপনাকে তো আটকানোই যাচ্ছে না। প্রতি ম্যাচেই বিপক্ষ আপনার পেসের ভয়ে কাঁপছে! কতটা এনজয় করছেন?
আকাশ: দারুণ এনজয় করছি। বিপক্ষের ব্যাটাররা আমার নাম শুনে কাঁপলে, একজন জোরে বোলারের কাছে এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। তবে শুধু আমি নই, মুকেশ কুমার এবং ঈশান পোড়েলও দারুণ ছন্দে আছে। আর সেটাই আমাদের দলের সাফল্যের সবচেয়ে বড় কারণ।
প্রশ্ন: মরসুমের শুরুটা কিন্তু এমন ছিল না। কাঁধের চোটের জন্য বিজয় হাজারে ট্রফি খেলতে পারেননি। এরপর কোনও প্র্যাকটিস ম্যাচ না খেলেই, রঞ্জি খেলতে শুরু করে দিলেন। কতটা কঠিন ছিল?
আকাশ: আমার জন্য সেই সময় খুবই কঠিন ছিল। কাঁধের চোটের জন্য মাঠে নামা তো দূরের কথা, আমি অনেক মাস বোলিং করতেই পারিনি। কিন্তু আমাকে পারফর্ম করতেই হত। কারণ মুকেশ সেই সময় ভারতীয় দলে ছিল। আর শুধু দলের একজন সদস্য হয়ে সময় কাটাতে চাইতাম না। একজন ম্যাচ উইনার হওয়াই আমার সবসময় লক্ষ্য ছিল। আর তাই প্রতি ম্যাচকেই ফাইনাল হিসেবে ধরে নিয়েছিলাম।
প্রশ্ন: চোটে ভোগার সময় মন খারাপ হত না?
আকাশ: একবারের জন্যই মন খারাপ করিনি। যারা আমাকে চেনে, তারা জানে যে আমি মানসিকভাবে কতটা শক্তিশালী। ছোটবেলা থেকেই লড়াই করেছি। তাই একটা চোট আমাকে মানসিকভাবে ভঙ্গুর করতে পারেনি।
প্রশ্ন: আপনি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর দলে আছেন। বিরাট কোহলি, ফ্যাফ ডু প্লেসিস, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলদের বিরুদ্ধে নেটে বোলিং করার জন্য কি মানসিক দৃঢ়তা আরও বেড়েছে?
আকাশ: একেবারেই তাই। আমি প্রথম আরসিবি-র নেটে যাওয়ার পর শুধু ভাবতাম, ওঁদের মধ্যে ও আমার মধ্যে কিসের তফাৎ! কেন বিরাট ভাই বাকিদের থেকে এগিয়ে আছেন? সেই প্রশ্ন বারবার নিজেকে করেছি। এবং ওঁদের সঙ্গে মিশে যাওয়ার পর বুঝতে শিখেছি যে মানুষ হিসেবে আমরা সবাই এক হলেও, বিরাট ভাই ও শুধু মানসিক দৃঢ়তার জন্য বাকিদের থেকে এগিয়ে আছে।
প্রশ্ন: বিরাট কোহলির কাছ থেকে মানসিক দৃঢ়তার ব্যাপারে আর কী শিখেছেন?
আকাশ: শুধু বিরাট ভাই নয়, আইপিএল চলার সময় মাহি ভাইয়ের (পড়ুন মহেন্দ্র সিং ধোনি) মানসিক দৃঢ়তার বিষয়ে অনেক কিছু শিখেছিলাম। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট থেকে আন্তর্জাতিক স্তর কতটা আলাদা, আন্তর্জাতিক মঞ্চে ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করার জন্য কেমন স্কিল দরকার, ম্যাচে ব্যাপক মার খেলে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয় সেটা নিয়ে অনেক কিছুই জেনেছি। আন্তর্জাতিক মঞ্চের পারফর্মাররা আমাদের থেকে সবসময় একধাপ এগিয়ে থাকে। এই কঠিন মানসিকতার জন্যই। সেগুলো নিয়ে ওঁদের কাছ থেকে শিখেছি। এবং রপ্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কারণ শেখার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
প্রশ্ন: ধোনি আলাদাভাবে কোনও টিপস দিয়েছিলেন?
আকাশ: টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের স্লগ ওভারে স্লোয়ার ইয়র্কার খুব ভাইটাল হয়ে যায়। তবে আমি ইয়র্কার বোলিং করতে ভয় পেতাম। কারণ সেটা ফুলটস হয়ে গেলেই চার-ছক্কা খেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। মাহি ভাইকে সেটা বলার পর ওঁ বলেছিল, 'কোনও জিনিসকে ভয় পেলে জীবনে উন্নতি করতে পারবি না। একটা কঠিন জিনিসকে এমনভাবে রপ্ত করবি, যাতে ভয় তোর কাছ অনেক দূরে চলে যায়।' মাহি ভাইয়ের সেই টিপস আমি এখনও মেনে চলেছি। এবং ফল পাচ্ছি।
প্রশ্ন: মুকেশ, ঈশানের সঙ্গে বোলিং করা কতটা উপভোগ করছেন?
আকাশ: দারুণ উপভোগ করি। সবচেয়ে বর কথা হল আমাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র ইগো নেই। প্রত্যেকেই দলের জন্য পারফর্ম করতে মরিয়া হয়ে থাকি। আর তাই আমাদের পেস বোলিং লাইনআপ ভারতসেরা। এবং বাংলা গত তিন মরসুম ধরে ধারাবাহিকভাবে খেলে আসছে।
প্রশ্ন: উইকেট নেওয়ার পর বুক ঠুকে সেলিব্রেশনের বিশেষ কোনও কারণ?
আকাশ: তিন বছর আগে রঞ্জি ফাইনাল হেরে গিয়েছিলাম। সেই ক্ষত এখনও বুকে বয়ে নিয়ে বেড়াই। সেই ভুল শুধরে এবার রঞ্জি ট্রফি জিততে মরিয়া হয়ে আছি। আর তাই উইকেট পেলেই বুক ঠুকে সেলিব্রেশন করি। বুঝিয়ে দিতে চাই যে, আমরা তৈরি আছি। আমিও ফাইনালের জন্য একেবারে প্রস্তুত। আমরা যদি নিজেদের সঠিকভাবে মেলে ধরতে পারি তাহলে ভারতের যে কোনও দলকে হারিয়ে দেব।
প্রশ্ন: আপনার আর একটা সেলিব্রেশন ভাইরাল হয়েছে। ম্যান অফ দ্য ম্যাচ পুরস্কার হাতে নিয়েই আপনি নমস্কার করছেন। এর পিছনে রহস্য?
আকাশ: পরিবার থেকেই এই শিক্ষা পেয়েছি। নিজে ভালো ফল করলে হাতজোর করে নমস্কার করার প্রথা আমাদের ঘরে রয়েছে। বড় ও গুরুজনদের নমস্কার জানিয়ে হাতজোর করেছিলাম।
প্রশ্ন: হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ডের পর এবার মধ্যপ্রদেশ। তিনটি ম্যাচ কাকে উৎসর্গ করলেন?
আকাশ: আমার বাবা প্রয়াত রামজি সিংকে উৎসর্গ করলাম। উনিই আমাদের স্কুলে গেমস টিচার ছিলেন। বাবা-র কাছ থেকেই ক্রিকেটের প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেছিলাম।
প্রশ্ন: এবার ফাইনাল। ঘরের মাঠে সৌরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বদলা নেওয়ার জন্য নিশ্চয়ই মুখিয়ে আছেন?
আকাশ: আমাদের দলের কেউ এই ফাইনালকে বদলার ম্যাচ হিসেবে দেখছি না। আমাদের কাছে এটা আর একটা ম্যাচ। ঘরের মাঠে এমন বড় ম্যাচ খেলব, সেটা নিয়ে উদ্দীপনা আছে। তবে আমরা বাড়তি আবেগ না দেখিয়ে নিজেদের যোগ্যতা অনুসারে এবং প্রসেস মেনে খেলতে চাই। সেটা করতে পারলে চ্যাম্পিয়ন হতে সমস্যা হবে না। কারণ ভারতের প্রতি ক্রিকেটারই রঞ্জি ট্রফি হাতে তুলতে চায়।